প্রাগৈতিহাসিক যুগের সভ্যতাকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছিল :- ( ১ ) প্রাচীন প্রস্তর যুগ , ( ২ ) মধ্যপ্রস্তর যুগ , ( ৩ ) নতুন প্রস্তর যুগ এবং ( ৪ ) ধাতু যুগ ।)

source: adobe stock



 ( ১ ) প্রাচীন প্রস্তর যুগ , 

( ২ ) মধ্যপ্রস্তর যুগ , 

( ৩ ) নতুন প্রস্তর যুগ এবং

 ( ৪ ) ধাতু যুগ ।

 ( ১ ) প্রাচীন প্রস্তর যুগ : 

                     অনুমান করা হয় যে , যিশুখ্রিস্টের জন্মের পাঁচ লক্ষ বছর আগেই প্রাগৈতিহাসিক যুগের ভারতে প্রাচীন প্রস্তর যুগের সূচনা হয় এবং আনুমানিক ৮,০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এই যুগের শেষ হয় ।          ভারতে প্রাচীন প্রস্তরযুগের মানুষের আকৃতি ছিল খর্বকায় এবং ঘাের কৃষ্ণবর্ণ । এই যুগের মানুষের নির্দিষ্ট বাসস্থান ছিল না , তারা কৃষিকাজ জানত না এবং আগুন জ্বালাতে পারত না । এ প্রাচীন প্রস্তরযুগের মানুষ খাদ্য উৎপাদক ' ছিল না — তারা ছিল খাদ্য সংগ্রাহক । বেঁচে থাকার জন্য তারা শিকার করত , খাদ্যের উপযােগী ফলমূল ও লতাগুল্ম সংগ্রহ করে বেড়াত এবং খাদ্য সংগ্রহ ও আত্মরক্ষার জন্য অমসৃণ পাথরের সরঞ্জাম ও হাতিয়ার ব্যবহার করত ।

ভারতের পশ্চিম পাঞ্জাব এবং দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু অঞ্চলে প্রাচীন প্রস্তরযুগের মানুষের তৈরি অমসৃণ পাথরের সরঞ্জাম পাওয়া গিয়েছে । । 

( ২ ) মধ্যপ্রস্তর যুগ : 

                       আনুমানিক ৮,০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ৪,০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত সময়ে ভারতে মধ্যপ্রস্তর যুগস্থায়ী হয় । পাথরের ফল ও ছােটোছােটো পাথরের নুড়ি ছিল এই যুগের মানুষের প্রধান হাতিয়ার । প্রথম দিকে পশুশিকার মানুষের প্রধান জীবিকা ছিল বটে , কিন্তু এই যুগের শেষের দিকে চাষ - আবাদের নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে । 

 তিনেভেলি , গুজরাটের সবরমতি ও বােম্বাই - এর উপকূল অঞ্চলে , দক্ষিণ ভারতের গােদাবরী ও নর্মদা উপত্যকা এবং মহীশূরের ব্রম্মগিরি অঞলে মধ্য প্রস্তরযুগের মানুষের তৈরি পাথরের সরঞ্জাম ও হাতিয়ার পাওয়া গিয়েছে । 

( ৩ ) নতুন প্রস্তর যুগ :

                          মধ্যপ্রস্তর যুগের পর আসে নতুন বা নব্যপ্রস্তর যুগ । মােটামুটিভাবে খ্রিস্টপূর্ব ৪,০০০ অব্দ থেকে ভারতে এই যুগের সূচনা হয় । পাথরের জৈর অস্ত্রশস্ত্র এই যুগের মানুষের প্রধান উপকরণহলেও সেগুলি ছিল মসৃণ ও ধারালাে । এই যুগের মানুষ শস্যোৎপাদন , গৃহপালিত পশুর ব্যবহার , ঘরবাড়ি নির্মাণ ও আগুনের ব্যবহার জানত — তবে যাযাবর জীবনধারণ তখনও ছিল । এই যুগে কুমােরের চাকের ব্যবহার শুরু হলে মৃৎশিল্পের অগ্রগতি হয় । মেহেরগড় সভ্যতা নতুন প্রস্তর যুগের সমসাময়িক সভ্যতা ছিল । 

ভারতের প্রায় সর্বত্রই নতুন - প্রস্তর যুগের সভ্যতার নিদর্শন অল্প - বিস্তর পাওয়া গেছে ( যেমন : সিন্ধু , বেলুচিস্তান , বিহার , উড়িষ্যা ও আসাম ) । । 

( ৪ ) তাম্র - প্রস্তর যুগ : 

                              ভারতে নব্যপ্রস্তর যুগ ও ধাতু যুগের মধ্যে কোনাে পরিষ্কার সীমারেখা টানা সম্ভব নয় , কারণ তামার ব্যবহার শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে এই যুগের মানুষ পাথরের তাম্র - ব্রোঞ্জ যুগে তৈরি তামার ব্যবহারও করতে থাকে । তাই এই যুগকে তাম্র প্রস্তর যুগবলা কুড়ুল ও তামা ঢালাইয়ের ছাঁচ হয় । টিনের সঙ্গে তামা মিশিয়ে প্রস্তুত করা ব্রোঞ্জ দিয়ে এই যুগের অস্ত্রশস্ত্র ও নানান প্রয়ােজনীয় দ্রব্য তৈরি হত । হরপ্পা সভ্যতা ছিল তা প্রস্তর যুগের সমসাময়িক সভ্যতা ।


Post a Comment

0 Comments